Sunday, June 21, 2015

রোমিও জুলিয়েট ২য় পাঠ

বৃদ্ধ মন্টেগুর একমাত্র ছেলে রোমিও। সে একজন সুন্দর-
সুপুরুষ-স্বাস্থ্যবান যুবক। সে শুধু সুন্দরই নয়, আচার-আচরণেও
খুব ভদ্র। তার মতো সাহসী, বীর সে অঞ্চলে খুব কমই
আছে। এক কথায় সে একজন আদর্শ তরুণ।
বেশ ক’দিন ধরেই মন খারাপ রোমিওর। এর কারণ এক রূপসি
যুবতি—নাম রোজালিন। রোমিও চায় তাকে বিয়ে করতে কিন্তু
রোজালিন মোটেও খুশি নয় তার উপর। বেশ কিছুদিন ধরে
রোজালিন না আসায় রোমিওর মন এতই খারাপ যে বন্ধু-
বান্ধবদের সাথে পর্যন্ত দেখা করছে না সে। পাগলের
মতো শুধু বনে বনে ঘুরে বেড়াচ্ছে। তার দুজন অন্তরঙ্গ
বন্ধুর মধ্যে একজন মন্টেগু কর্তার ভাইপো সেনর
বেনভোলিও, অপরজন রাজার আত্মীয় মার্কুলিসও। দাঙ্গা বন্ধ
হবার পর রোমিওকে খুঁজতে খুঁজতে তারা এসে হাজির হল
সেই গভীর জঙ্গলে। অনেক খোঁজাখুঁজির পর তারা দেখা
পেল রোমিওর। যার জন্য রোমিওর এ অবস্থা, সেই
রোজালিনকে নিয়েও হাসি-ঠাট্টা করল তারা। কিন্তু তাতে দমে না
গিয়ে বন্ধুদের অনুনয় করে বলল রোমিও, ‘ভাই, যে ভাবেই
হোক তোরা ব্যবস্থা করে দে যাতে অন্তত একবার তার
দেখা পাই।’
অরণ্য থেকে বেরিয়ে এসে যখন তারা রাস্তায় কথাবার্তা
বলছিল, সে সময় একজন লোক এসে একটা কাগজ মেলে
ধরল তাদের সামনে। কাগজটা আর কিছু নয় একটা তালিকা। তারা
পড়ে দেখলে ওতে রয়েছে ভেরোনার সব সম্ভ্রান্ত
বংশের নারী-পুরুষদের নাম, বাদ গেছে শুধু মন্টেগু পরিবার।
যে লোকটা কাগজ নিয়ে এসেছিল সে ক্যাপুলেটদের বাড়ির
চাকর—সম্পূর্ণ নিরক্ষর। কাগজে কী লেখা তা সে জানেনা—
ক্যাপুলেট বাড়ি কর্তা-গিন্নিরও জানা নেই সেটা। তারা ওর হাতে
কাগজটা ধরিয়ে দিয়েই বলেছেন—’এতে যাদের যাদের নাম
লেখা আছে তাদের সবাইকে নিমন্ত্রণ করে আসবি। তাদের
বিনীতভাবে বলবি তারা যেন আজ রাতে আমাদের বাড়িতে
নৈশভোজনের আসরে যোগ দেন। সেই সাথে নাচ-গানের
ব্যবস্থার কথাটাও বলে আসবি।’
‘তাই হবে কর্তা’—বলে কাগজখানা হাতে নিয়ে বেরিয়ে
পড়েছে সে। সে যে সম্পূর্ণ নিরক্ষর একথাটা লজ্জায়
জানাতে পারেনি মনিবকে। কাজেই রাস্তা-ঘাটে যাকে পাচ্ছে,
তাকে দিয়েই কাগজটা পড়িয়ে নিচ্ছে। ক্যাপুলেটদের সাথে
মন্টেগুদের চিরকালীন রেষারেষির ব্যাপারটা জানত চাকরটি।
কিন্তু রোমিও ও তার দু-বন্ধুকে জানতে না সে। জানলে
কখনই সে কাগজটি তাদের পড়তে দিত না।
তালিকায় চোখ বুলিয়ে নিয়ে বলে উঠল রোমিও, ‘আরে!
এযে দেখছি চাঁদের হাট বসাবার ব্যবস্থা হয়েছে। শহরের
সম্ভ্রান্ত বংশীয় স্ত্রী-পুরুষ কেউ বাদ নেই এতে।’
লোকটিকে কাগজটা ফিরিয়ে দিয়ে রোমিও বলল, তা ভাই
এদের কোথায় নিয়ে যাবার ব্যবস্থা হয়েছে?’
লোকটি উত্তর দিল, ‘আজ্ঞে হুজুর, উপরে।’
‘কী বললে, উপরে! তা সে জায়গাটা কোথায়?’ জানতে চাইল
রোমিও।
‘আজ্ঞে, রাতের বেলা আমাদের বাড়িতে খাওয়া-দাওয়ার
নিমন্ত্রণ করা হয়েছে এদের সবাইকে। কর্তা বলেছেন নাচ-
গানের ব্যবস্থাও করা হয়েছে’—উত্তর দিল লোকটি।
‘তা তোমার মনিবটি কে বাপু?’ জানতে চাইল রোমিও।
‘ক্যাপুলেটদের বুড়ো কর্তাই আমার মনিব’—বলল লোকটি,
তবে আপনি যদি মন্টেগুদের কেউ না হন, তাহলে অনায়াসে
সেখানে যেতে পারেন বন্ধুদের নিয়ে। সেখানে গিয়ে
রাতে খাওয়া-দাওয়া করবেন। আচ্ছা হুজুর! তাহলে আসি’—বলে
চলে গেল লোকটি।

No comments:

Post a Comment